25 Nov 2024, 11:17 am

সংঘাত এড়াতে একমত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংএর মধ্যে এক মুখোমুখি বৈঠক সোমবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে দুই নেতাই ইউক্রেনের যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন।

জিটুয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য  বালিতে আগত মি. বাইডেন এবং মি শি-র মধ্যে এই বৈঠক তিন ঘন্টা ধরে চলে। সাক্ষাতের শুরুতে দুই নেতা সাংবাদিকদের সামনে হাসিমুখে করমর্দন করেন।

এ বৈঠকের ফলে দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্প্রতি শীতল হয়ে পড়া সম্পর্ক অন্তত কিছুটা উষ্ণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে মি. বাইডেন এ বৈঠকের সময় মি. শি-কে বলেন, দু দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলবে, কিন্তু তা সংঘাতে পরিণত হতে দেয়া উচিত নয়।

মি. শি এ বৈঠকে জো বাইডেনের সাথে একমত হন যে ইউক্রেনের যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কখনোই হওয়া উচিত নয়।

মি. বাইডেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোন নতুন ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি ও শি জিনপিং পরস্পরকে বোঝেন এবং বেজিং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা পাল্টে দিতে চায় না।

বৈঠকের সময় তিনি চীনের শিনজিয়াং ও তিব্বত অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাইওয়ানের ব্যাপারে চীন যে “জবরদস্তিমূলক এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ” নিচ্ছে তারও বিরোধিতা করেন মি. বাইডেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, তারদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যেন যথাযথভাবে রক্ষিত হয় তা সারা বিশ্ব প্রত্যাশা করে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মি. শি সতর্ক করে দিয়েছেন যে তাইওয়ানের অবস্থান চীনের স্বার্থের কেন্দ্রস্থলে – যে দ্বীপটিকে চীন তার নিজের অংশ বলে মনে করে।

আগস্ট মাসে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর বেজিং ক্ষিপ্ত হয় এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

  বৈঠকে আদৌ কতটা অগ্রগতি হবে?
মি. বাইডেন ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট হবার পর এটিই দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।  তবে এর আগে তারা পাঁচবার ফোন ও ভিডিও  কলে কথা বলেছেন এবং মি. বাইডেন যখন  ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনও তাদের মধ্যে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসে তাদের মধ্যে শেষবার যখন কথা হয় তখন তারা ইউক্রেন, কোভিড এবং তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে কথা বলেছিলেন।

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আগস্ট মাসে তাইওয়ান সফর করার পর চীন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় এবং প্রেসিডেন্ট শি সেসময় ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেছিলেন।

এর পর  চীন জলবায়ু এবং কোভিড মহামারী সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়।

সোমবারের বৈঠকের পর এগুলোর কয়েকটি আবার শুরু করতে পারলে তাকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবেই দেখা হবে – সংবাদমাধ্যমকে এমন কথা বলেছেন একজন মার্কিন কর্মকর্তা।

দুই নেতার আলোচনায় বাণিজ্য, উত্তর কোরিয়ার উস্কানিমূলক আচরণ, তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো অভিযানের মত প্রসঙ্গগুলো ছিল ।

সংবাদ মাধ্যমের খববে বলা হয়, চীনা নেতাকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোন সংঘাত বেধে যাওয়া ঠেকানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি এ ব্যাপারেও একমত হন যে মুখোমুখি কথা বলার চেয়ে ভালো বিকল্প খুব কমই আছে।

মি. বাইডেন আরো বলেন, দু দেশের মধ্যে যোগাযোগের পথগুলো খোলা রাখার ব্যাপারে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ – যার ফলে দু দেশ জরুরি বৈশ্বিক ইস্যু – যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা নিরাপত্তাহীনতা – এগুলোর ব্যাপারে একসাথে কাজ করতে পারে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন  আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এক সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে  কাজ করবে তা সারা বিশ্বই প্রত্যাশা করে।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কী বললেন জো বাইডেনকে?

মি.শি বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে একসঙ্গে কাজ করতে চান।

“গোটা বিশ্ব প্রত্যাশা করে যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই সম্পর্ককে যথাযথভাবে রক্ষা করবে । আমাদের এ বৈঠক বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বিশ্বশান্তির জন্য আমাদেরকে সবদেশের সাথে মিলে কাজ করতে হবে।”

“আমাদের এ বৈঠকে  কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর খোলাখুলি মতামত বিনিময় করা প্রয়োজন” – বলেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট শি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক  এখন এমন একটি অবস্থায় আছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং  এখানে দু-দেশের নেতা হিসেবে তাদের  “সঠিক গতিপথ নির্ধারণ করতে হবে।”

“আমাদের  দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আগামী দিনে সামনে এগিয়ে নেয়া এবং উন্নত করার জন্য  সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে হবে।“

বৈঠকের ফলে চীনমার্কিন সম্পর্ক কতটা স্বাভাবিক হতে পারে?

সম্প্রতি বাণিজ্য, তাইওয়ান প্রশ্ন, ইউক্রেন যুদ্ধ, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ইত্যাদি একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে চীন-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

বিবিসির বিশ্লেষক স্টিফেন ম্যাকডনেল বলছেন,  যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় সরকারই উপলব্ধি করছে যে দুদেশের মধ্যেকার উত্তেজনা অত্যন্ত গভীর এবং কোন যাদুমন্ত্রবলে এর সমাধান হয়ে যাবে এটা কোন পক্ষই মনে করছে না।

তবে এই দুই দেশের মধ্যে আকস্মিকভাবে বড় কোন সংঘাত বেধে যাওয়া ঠেকানো যায় এমন  কিছু পদক্ষেপের ব্যাপারে দু’নেতা একমত হতে পারলে সেটাই হবে  এক বড় অগ্রগতি, বলছেন স্টিফেন ম্যাকডনেল।

তিনি বলছেন, এক দেশ আরেক দেশের কোন আচরণকে ভুল বোঝার ফলে একটা যুদ্ধ বেধে যাক – এটা কোন পক্ষই চাইছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে এরকম কিছু ঠেকানোর  ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে – যার মধ্যে  ‘স্পষ্ট  যোগাযোগের চ্যানেল’ এবং ‘কিছু লাল রেখা অতিক্রম না করার নীতি“ থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, তৃতীয় কোন দেশে বড় সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার এ ধরনের বৈঠক যদিও কিছুটা ‘মিডিয়াতে দেখানোর জন্যই’ আয়োজন করা হয়, তবে এগুলো সম্পূর্ণ অর্থহীন নয়।

হংকং-এর চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়ের ল্যান্ড্রি বলেন, এসব বৈঠকেও কখনো কখনো রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে গেছে এমন নজির আছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14839
  • Total Visits: 1304228
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১১:১৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018